বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ খেলায় জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। শুক্রবার (২৭ শে অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এম চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে পাকিস্তানকে ১ উইকেটে হারিয়েছে প্রোটিয়ারা। এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান অলআউট হয় ২৭০ রানে। পাকিস্তানের সৌদ শাকিল দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫২ রান করেন।

পাকিস্তানের বিপক্ষে খেলার আগে চার ম্যাচের প্রতিটিতেই আগে ব্যাট করে জয় পেয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। রান তাড়ায় খেলেছে কেবল একটি ম্যাচ। পুঁচকে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেই ম্যাচেই অঘটনের জন্ম দিয়ে বসে তারা। তবে একই ভুল করেনি আজ।

শুক্রবার (২৭ অক্টোবর) চেন্নাইয়ের এম. চিদাম্বরাম স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে বরাবরের মতোই উদ্বোধনী জুটি পাকিস্তানকে বড় সংগ্রহ এনে দিতে ব্যর্থ দুই ওপেনার আব্দুল্লাহ শফিক ও ইমাম উল হক। প্রথম পাওয়ার প্লেতেই দলীয় ৩৮ রানের মধ্যেই বিদায় নেন তারা। পাকিস্তানের বিপদের মধ্যে তৃতীয় উইকেটে ৪৮ রানের জুটি গড়েন বাবর-রিজওয়ান।

দলীয় ৮৬ রানে রিজওয়ানকে উইকেটের পেছনে ডি ককের ক্যাচ বানিয়ে জুটি ভাঙেন কোয়েটজি। চতুর্থ উইকেটে ইফতিখারকে নিয়ে বাবর ৪৩ রানের জুটি গড়েন। দলীয় ১২৯ রানে তাবরাইজ শামসির বলে ক্লাসের দুর্দান্ত ক্যাচে প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন ইফতিখার।

১২ রান পর দলীয় ১৪১ রানে বিদায় নেন অধিনায়ক বাবর আজম। তার আগে বাবর ৬৫ বলে ৪ চার ও ১ ছয়ে ৫০ রানের ইনিংস উপহার দেন। শেষ দিকে সৌদ শাকিল ও শাদাব খানের ৭১ বলে ৮৪ রানের জুটিতে আড়াইশো পেরোয় পাকিস্তানের ইনিংস।

শাদাব ৪৩ রান করে ফিরলেও সৌদ শাকিল ঠিকই ফিফটি তুলে নেন। তবে ৫২ রান করেই বিদায় নেন তিনি। এতে ৪৬ দশমিক ৪ ওভারেই ২৭০ রানে অলআউট হয়ে যায় পাকিস্তান।

দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে তাবরাইজ শামসি সর্বোচ্চ ৪ উইকেট শিকার করে পাকিস্তানের ব্যাটিংয়ে একাই ধস নামান। এ ছাড়া পেসার মার্কো জানসেন তিনটি ও জেরাল্ড কোয়েটজে দুটি উইকেট লাভ করেন।

রান তাড়ায় শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক ছিল প্রোটিয়ারা। তবে উইকেটও হারাতে হয় দ্রুত। দলীয় ৩৪ রানে শাহিন আফ্রিদির শিকার হয়ে ফেরেন দুর্দান্ত ফর্মে থাকা কুইন্টন ডি কক। ১৪ বলে ৫ চারে ২৫ রান করে ফেরেন তিনি। দুই ম্যাচ পর একাদশে ফেরা অধিনায়ক বাভুমাও বেশিদূর এগোতে পারেননি। ২৮ বলে ২৭ রান করা এই ওপেনারকে তুলে নেন মোহাম্মদ ওয়াসিম জুনিয়র।

লক্ষ্য খুব একটা কঠিন না হলেও একপ্রান্ত আগলে রাখাটা জরুরি ছিল। দায়িত্ব নিয়েই সেই কাজটা করে দেখিয়েছেন মারক্রাম। প্রথমে রাসি ফান ডার ডুসেনকে (২১) নিয়ে গড়েন ৫৪ রানের জুটি। এরপর হাইনরিখ ক্লাসেন (১২) দ্রুত ফিরে গেলেও জুটি বাঁধেন ডেভিড মিলারের সঙ্গে। পঞ্চম উইকেটে ৭০ রান আসে এই জুটি থেকে। থিতু হয়েও মিলার কাটা পড়েন ৩৩ বলে ২৯ রানে।

মার্কো ইয়ানসেন ও গেরাল্ড কোজির সঙ্গে ছোট জুটি সাজিয়ে ম্যাচটা ধরেই রেখেছিলেন মারক্রাম। কিন্তু দল যখন জয় থেকে ২১ রান দূরে তখনই পথ হারিয়ে বসেন তিনি। উসামা মীরকে উড়িয়ে মারতে গেলেও বল তার ব্যাটের কানায় লেগে আশ্রয় নেয় ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা পাক অধিনায়ক বাবর আজমের। বড় মাছ শিকার করে প্রাণ ফিরে পায় পাকিস্তান। এরপর কোজিকে ফিরিয়ে জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়ে তোলে তারা। লুঙ্গি এনগিদিকে নিজের বলে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিয়ে বিদায় করেন হারিস রউফ।

শেষ উইকেট জুটিতে জয়ের জন্য ১১ রান প্রয়োজন ছিল প্রোটিয়াদের। পাকিস্তানের পেসারদের একের পর এক তোপ বেশ সতর্কতার সঙ্গে সামলান কেশভ মহারাজ (৭*) ও তাবরাইজ শামসি (৪*)। পেসারদের কোটা শেষ হওয়ার পর স্পিনাররা আসতেই আর দেরি করেননি তারা। ৪৮তম ওভারের দ্বিতীয় বলে মোহাম্মদ নাওয়াজকে চার মারার পর বুনো উল্লাসে মেতে ওঠে জয় উদযাপন করেন মহারাজ।

এর আগে নিজেদের ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই ওপেনার আবদুল্লাহ শফিককে হারায় পাকিস্তান। ৯ রানে তাকে বিদায় করেন মার্কো ইয়ানসেন। আরেক ওপেনার ইমাম উল হককেও বিদায় করেন তিনি। ১২ রানে ফেরেন এই বাঁহাতি ব্যাটার। এরপর দলের হাল ধরেন বাবর আজম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুজনে গড়েন ৪৮ রানের জুটি।

রিজওয়ানকে ফিরিয়ে এই জুটি ভাঙেন কোজি। ৩১ রানে রিজওয়ান ফিরলেও একপ্রান্তে লড়ে ফিফটি তুলে নেন বাবর আজম। এরপর অবশ্য আর রান যোগ করতে পারেননি পাক অধিনায়ক। তাবরাইজ শামসির বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ তুলে দেন তিনি। আম্পায়ার শুরুতে আউট না দিলেও শেষ মুহূর্তে গিয়ে রিভিউ নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক টেম্বা বাভুমা। সফল রিভিউতে ফিরে যান বাবর।

মাঝে ইফতিখার আহমেদ এসে খেলেন ২১ রানের ইনিংস। এরপর জুটি গড়েন সাউদ শাকিল ও শাদাব খান। ৭১ বল খেলে দুইজনে যোগ করেন ৮৪ রান। ৪০তম ওভারে কোয়েটজের বল উড়িয়ে মারতে গিয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েন শাদাব। ফেরেন ৩৬ বলে ৪৩ রান করে। তবে একপ্রান্তে ব্যাট চালাতে থাকা শাকিল ৫০ বলে তুলে নেন ফিফটি। এরপর আর দুই রান যোগ করেই শামসির শিকার হন। শেষদিকে মোহাম্মদ নাওয়াজের ২৪ বলে ২৪ রানের ইনিংসে লড়াকু সংগ্রহ পায় পাকিস্তান।

দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ১০ ওভারে ৬০ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন শামসি। পরে দায়িত্বশীল ব্যাটিং করে জিতে নেন ম্যাচসেরার পুরস্কারও। ৯ ওভারে ৪৩ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন ইয়ানসেন। জোড়া উইকেট পান কোজি।

এই জয়ে ভারতকে টপকে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে উঠে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা। ছয় ম্যাচে পাঁচ জয়ে ১০ পয়েন্ট অর্জন করেছে তারা। একটি ম্যাচ কম খেলে সমান পয়েন্ট থাকলেও রানরেটের ব্যবধানে পিছিয়ে আছে ভারত। অন্যদিকে কাগজে কলমে সম্ভাবনা থাকলেও সেমিফাইনাল খেলার রাস্তাটা এখন অনেকটাই কঠিন হয়ে গেল বাবর আজমদের জন্য। ছয় ম্যাচে দুই জয়ে চার পয়েন্ট নিয়ে ছয়ে আছে তারা।  বিশ্বকাপে এবারই  টানা চার ম্যাচে হার দেখতে হলো তাদের।